অযোধ্যা পাহাড় | Ajodhya Hill শীতকালে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় এক অপূর্ব সুন্দর ভ্রমণের জায়গা। ছোটনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত পুরুলিয়া অন্যতম সেরা জায়গা অযোধ্যা পাহাড়। অযোধ্যা পাহাড় দলমা পাহাড় এর অংশ। এই পাহাড়কে অনেক সময় পশ্চিমঘাট পর্বতের সম্প্রসারিত অংশ বলা হয়ে থাকে। অযোধ্যা পাহাড়ের উচ্চতম শৃঙ্গের নাম হচ্ছে ‘গোর্গাবুরু’। অযোধ্যা পাহাড়ের নিকটবর্তী শহর হল বাগমুন্ডি। অনেকে রক ক্লাইম্বিং শিখতে এই বাগমুন্ডি এসে থাকেন। অযোধ্যা পাহাড়ে আসার মূলত দুটি রাস্তা আছে। একটা রাস্তা ঝালদা হয়ে আর অন্যটা হল ভায়া সিকাকাবাদ। অযোধ্যা পাহাড়ে গোর্গাবুরু ছাড়াও ময়ূরী নামে আরও একটি শৃঙ্গ আছে। পাহাড়ের উপরটা সমতল আকারের। অযোধ্যা হিল টপ থেকে সূর্যাস্ত দেখতে অপূর্ব সুন্দর লাগে। পাহাড়ে শাল, পিয়াল, মহুয়া ইত্যাদি গাছ দিয়ে ঘেরা অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে।
পৌরাণিক গুরুত্ব
অযোধ্যা পাহাড়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হল সীতাকুণ্ড । হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে শ্রী রামচন্দ্র একবার সীতাকে নিয়ে এই অযোধ্যা পাহাড় এসেছিলেন। এখানে এসে সীতার খুব জল তেষ্টা পায় তখন ভগবান শ্রী রামচন্দ্র তীর মেরে মাটি থেকে জল বার করেন। তারপর থেকেই এই জায়গাটার নাম সীতাকুন্ড নামে পরিচিত প্রত্যেক বছর বৈশাখ মাসের পূর্ণিমার সময় উপজাতিরা এখানে এসে শিকারে অংশগ্রহণ করে।
বেড়াতে যাবার সময়
এই পাহাড় বছরের যেকোন সময় আসা যায়। তবে গ্রীষ্ম কালে এখানে খুব গরম পড়ে। তাই গরম কালটা বাদ দিয়ে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে যেকোন দিন চলে আসতে পারেন। জানুয়ারী বা ফেব্রুয়ারী মাসে অপূর্ব লাল পলাশ ফুলে গোটা পাহাড়ী এলাকা ঢেকে যায়।
খাওয়া দাওয়া
সব রকম বাঙালি খাবার এখানে পাবেন। ভাত, মাছ, সবজি, রুটি, মাংস ইত্যাদি।
অযোধ্যা পাহাড় Ajodhya Hill কি ভাবে যাবেন
ট্রেনে – হাওড়া স্টেশান থেকে চক্রধরপুর বা রুপসী বাংলা প্যাসেঞ্জার ট্রেনে চলে আসা যায় পুরুলিয়া বা বরাভুম স্টেশানে। অযোধ্যা পাহাড় যাবার মূলত দুটি রাস্তা আছে। বরাভূম স্টেশান থেকে গাড়ি ভাড়া করে বাঘমুন্ডি হয়ে 1 ঘন্টার মধ্যে চলে আসবেন অযোধ্যা পাহাড়ে Ajodhya Hill। এছাড়া যারা পুরুলিয়া স্টেশানে নামবেন তারা সিল্কা বাঁধ হয়ে অযোধ্যা পাহাড় পৌছবেন।
- 12827 হাওড়া – পুরুলিয়া সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস – হাওড়া থেকে ছাড়ে ভোর 04:50 ও পুরুলিয়াতে পৌছয় বেলা 10:50। অর্থাৎ হাওড়া থেকে পুরুলিয়া ৩০০ কিমি যেতে সময় নেয় প্রায় ৬ ঘন্টা।
- 58011 প্রতিদিন হাওড়া -চক্রধরপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জার – হাওড়া থেকে ছাড়ে রাত 11:05 ও পুরুলিয়া পৌছয় সকাল 06:20।
- প্রতিদিন 12865 লাল মাটি এক্সপ্রেস – হাওড়া থেকে সকাল 08:30 ও পুরুলিয়া পৌছয় বেলা 02:15
বাসে – কোলকাতা থেকে সরাসরি বাসে করে পুরুলিয়া আসা যায়। কোলকাতার ধর্মতলা বাস টারমিনাস থেকে নন স্টপ পুরুলিয়া যাবার বাস পাওয়া যায়। প্রতিদিন সকাল 6 টা থেকে দুপুর 2 টা পর্যন্ত 1 ঘন্টা ছাড়া ছাড়া কোলকাতার ধর্মতলা থেকে পুরুলিয়া যাবার পশ্চিম বঙ্গ সরকারের বাস ছাড়ে। এই বাসের ভাড়া 250 টাকা।
গাড়িতে – অনেকেই প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া বা ব্যক্তিগত গাড়ি করে অযোধ্যা পাহাড় বেড়াতে চলে আসেন। প্রতি বছর প্রচুর বাইক রাইডার বাইকে করে এখানে আসে।
একটি রাস্তা দুর্গাপুর হাইওয়ে ও আসানসোল হয়ে পুরুলিয়া ঢুকেছে এবং অপর রাস্তাটি আরামবাগ ও বাঁকুড়া হয়ে অযোধ্যা পাহাড় এসেছে। তবে এই দুটি রাস্তার মধ্যে দুর্গাপুর হাইওয়ে হয়ে রাস্তাটি অপেক্ষাকৃত ভালো ও মসৃণ। যারা প্রাইভেট কারে যাবেন তাদের পক্ষে দুর্গাপুর হাইরোড আসানসোল রাস্তাটাই ভালো হবে।
অযোধ্যা পাহাড় Ajodhya Hill কোথায় থাকবেন
অযোধ্যা পাহাড় Ajodhya Hill বেড়াতে এলে দুটি প্রধান থাকার জায়গা আছে। একটি হল পুরুলিয়া স্টেশন এর কাছে ও অন্যটি হল অযোধ্যা পাহাড়ের হিল টপে। অযোধ্যা পাহাড়ে থাকার জন্য দুটি ফরেস্ট রেস্ট হাউস আছে। এছাড়াও এখানে বেশ কিছু ইকো রিসোর্ট আছে। গোর্গাবুরু ইকো রিসোর্ট, পলাশ বিতান জঙ্গল হার্ট অ্যাড মুরগুমা, ইকো অ্যাডভেঞ্চার রিসোর্ট অ্যাড খাইরা বেরা খয়রাবেড়া।
হোটেল আকাশ, পুস্পক হোটেল, হোটেল জিনিয়াস, হোটেল হিল ভিউ ইত্যাদি।
পুরুলিয়া স্টেশানের কাছাকাছি থাকার জায়গা-
- মহেশ্বরী লজ
ফোন – 9332284315
- হোটেল স্বাগতম
ফোন – 8348179450
অযোধ্যা হিল টপের কাছাকাছি হোটেল-
- অযোধ্যা হিল টপ টুরিস্ট লজ
ফোন- 7477887560 / 9635076059
- আরণ্যক হোম স্টে
ফোন – 9932725555/ 9732394115
- মানভূম টুরিস্ট লজ
ফোন – 9734776894
- হিলভিউ লজ
ফোন – 9007509955
- অযোধ্যা হিল আর্কেড
ফোন – 7047632072
- অযোধ্যা অতিথি নিবাস
ফোন – 7872995645
- অযোধ্যা গেস্ট হাউস
ফোন – 8910972014
- ব্যাকপ্যাকার ক্যাম্প
ফোন – 7001762183
- কুশল পল্লি
ফোন – 09831260606
- আকাশ হিল টপ
ফোন – 08001501501
- পশ্চিমবঙ্গ সরকার যুব আবাস ডরমেটরি
অনলাইন বুকিংঃ youth hostel
Ajodhya Hill অযোধ্যা পাহাড়ের দ্রষ্টব্য দর্শনীয় স্থানগুলি হল
অযোধ্যা পাহাড়ে Ajodhya Hill দেখার প্রায় দশটি স্পট আছে। আর এই সবকটি স্পট ছোট গাড়ি করে দেখতে খরচ পরে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা।
আপার ড্যাম – একটি বিশাল সুন্দর জলাধার। এখানে ভিউ পয়েন্ট থেকে অসাধরন প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায়।
লোয়ার ড্যাম – এ দুটি হল এখানকার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মুল দুটি জলাধার।
বামনী ফলস – এটি একটি অসাধারণ ঝরনা। বামনি ফলস এর ভিউ পয়েন্ট থেকে অযোধ্যা খুব সুন্দর লাগে। এটি অযোধ্যা পাহাড়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দর্শনীয় জায়গা।
মাথা পাহাড় ও ফরেস্ট- মাথা গ্রামটা পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকে অবস্থিত। এখানে প্রতি বছর আদিবাসীদের একটি বার্ষিক মেলা অনুস্থিত হয়। শীতকালে মাথা গ্রামে রক ক্লায়িম্বিং, নেচার ক্যাম্প ইত্যাদি হয়ে থাকে।
ময়ূর পাহাড় – ময়ূর পাহাড় ছোট আকারের একটি পাহাড় খুব সহজেই আপনি এর উপরে উঠতে পারবেন এই পাহাড়ে প্রচুর ময়ূর আছে ওই কারণেই এই পাহাড়ের নাম ময়ূর পাহাড়।
পাখি পাহাড় –
নামের সাথে এই পাহাড়টির সাদৃশ্য আছে। দূর থেকে এই পাহারটি দেখলে মনে হয় অসংখ্য পাখি পাহাড়ে বসে আছে। পাখি পাহাড় টি আসলে একটি সাধারণ পাথুরে পাহাড় যার নাম ছিল ‘মুরা বুরু’ (উচ্চতা ৮০০ ফুট)। হাজার 997 সালে শিল্পী স্থানীয় আদিবাসীদের লোকেদের সাথে নিয়ে সরকারি সহায়তায় এক অনন্য অসাধারণ ভাস্কর্য তৈরি শুরু করেন। প্রথমে তিনি ওই এলাকার আদিবাসীদের ট্রেনিং দেন কিভাবে পাহাড়ে ভাস্কর্য ফুটিয়ে তুলতে হয়। এরপর পাহাড়ের গায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন পাখির ও জীবজন্তুর ছবি আঁকেন। তারপর ছেনি হাতুড়ি সাহায্যে দড়ি দিয়ে ঝুলে ঝুলে ওই সমস্ত ছবিকে আকৃতি (রক কাট আর্ট) দেন।
খয়রাবেরা ড্যাম ( khairabera dam ) –
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের খুব কাছেই আরও একটি সুন্দর পর্যটন স্থান গড়ে উঠেছে সেটি হল খয়রাবেরা ড্যাম। অযোধ্যা পাহাড় ভ্রমণ করার পর যদি হাতে কিছুটা অতিরিক্ত সময় থেকে থাকে তাহলে পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে চলে আসুন খয়রাবেরা। এখানকার পরিবেশ খুবই শান্ত ও মনোরম। প্রকৃতির মধ্যে শহর থেকে দূরে যারা থাকতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই জায়গাটি আদর্শ। এখানে দুদিকে দুটি পাহাড় উঠে গেছে মাঝখানে প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা এই খয়রাবেড়া ড্যাম। এখানে থাকার খুব বেশি জায়গা নেই একটি মাত্র ইকো অ্যাডভেঞ্চার রিসর্ট আছে। তাই যারা এখানে প্রকৃতির মাঝে নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে চান তারা অবশ্যই আগে থাকতে বুকিং করে রাখবেন। পাহাড়ে ঘেরা এই লেকের চারপাশে একবার পুরোটা পায়ে হেঁটে ঘুরে এলে মন্দ লাগবে না। গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে একটু গেলেই দেখতে পাবেন মাছকান্দা ঝরনা। এই লেকের জল এত স্বচ্ছ ও পরিষ্কার জেলের মধ্যে থাকা মাছগুলি ও স্পষ্ট দেখা যায়।
টুঙ্গা ফলস ও ড্যাম –
লহরিয়া ড্যাম ও শিব মন্দির – অযোধ্যা পাহাড় Ajodhya Hill থেকে কিছুটা দূরে আছে লহরিয়া ড্যাম্প। এটি একটি বিশাল প্রাকৃতিক জলাধার। জলাধারের পাশেই রয়েছে একটি প্রসিদ্ধ শিব মন্দির। এখানকার মূল আকর্ষণ এখানে প্রতি বছর শীতকালে বহু মানুষ আছেন পিকনিক করতে।
মার্বেল লেক – এটি একটি পাথরের পরিতক্ত খাদান। আগে এখান থেকে পাথর কাটা হত। এখন এটি একটি জলাধারের আকার নিয়েছে।
চরিদা গ্রাম- পুরুলিয়া এলে অবশ্যই একবার এই গ্রামে আসবেন। পুরুলিয়ার বিখ্যাত ছৌ নাচের মুখোস ও পোড়া মাটির নানান সামগ্রী এখানেই তৈরী হয়। তাই নিজের প্রিয় ঘর সাজাবার সামগ্রী এখান থেকে সুলভ মূল্যে কিনে নিন।