সুন্দরবন সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অরন্যের বনভূমি। গঙ্গা, পদ্মা ও মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত এই ব-দীপ অঞ্চল পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড়। সুন্দরবন অঞ্চলটির বেশীর ভাগ অংশ বাংলাদেশে ও বাকীটা পশ্চিমবঙ্গে। হুগলী নদীর মোহনায় প্রথমেই পড়ে সাগরদীপ। সাগরদীপ থেকে একটু পূর্বদিকে গেলে মৌসুনী আইল্যন্ড ও বকখালি। এরপর আরও পূর্বদিকে কিছুটা গেলে সুন্দরবন।
সুন্দরবনে কি কি দেখবেন –
১. কোর এরিয়া বোট সাফারি
২. ওয়াচ টাওয়ার
৩. ক্যানোপি ওয়াক
৪. বার্ড ওয়াচিং সেন্টার
৫. টাইগার রেসকিউ সেন্টার
কি কি ওয়াচ টাওয়ার আছে –
১. ঝিনেখালি ওয়াচ টাওয়ার
২. বুড়ির ডাবড়ি ওয়াচ টাওয়ার
৩. পাখিরালয়
৪. সুধন্যখালি ওয়াচ টাওয়ার
৫. সজলেখালি ওয়াচ টাওয়ার
৬. ঝড়খালি ওয়াচ টাওয়ার
৭. দোবাকি ওয়াচ টাওয়ার
৮. বনি ক্যাম্প
৯. হলি-ডে আইল্যান্ড
১০. নেতি ধোপানি ওয়াচ টাওয়ার
১১. কলস দীপ
সুন্দরবন টুর প্যাকেজ –
প্যাকেজ ১
একরাত ও দুইদিন প্যাকেজ – ২৭০০ টাকা প্রতিজন (বোটে রাতে থাকা)
একরাত ও দুইদিন প্যাকেজ – ৩০০০ টাকা প্রতিজন (হোটেলে রাতে থাকা)
প্যাকেজ ২
দু-রাত ও তিনদিন প্যাকেজ – ৩৩০০ টাকা প্রতিজন (বোটে রাতে থাকা)
দু-রাত ও তিনদিন প্যাকেজ – ৩৯০০ টাকা প্রতিজন (হোটেলে রাতে থাকা)
(১৫ জন গ্রুপ প্যাকেজ উপলব্ধ)
খাওয়া দাওয়া –
সুন্দরবনে একদম বাঙালি খাওয়া দাওয়া পেয়ে যাবেন। ভাত, ডাল, বেগুন ভাজা, রুই মাছের কালিয়া, চিকেন বা মর্টন, চাটনি ইত্যাদি। এখানে চিংড়ি, কাঁকড়া সহ অন্যান্য মাছ খুব টাটকা। অনেকই সুন্দরবন থেকে মাছ প্যাকিং করে বাড়ি নিয়ে যান।
কিভাবে যাবেন –
ট্রেনে – শিয়ালদা থেকে ট্রেনে চলে আসুন ক্যানিং।
শিয়ালদা থেকে ক্যানিং – সকাল 07:42 AM, 08:22 AM ভাড়া ১৫ টাকা সময় লাগে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট।
এরপর ক্যানিং থেকে অটো করে চলে আসুন সোনাখালি ফেরিঘাট। শেয়ার অটো ভাড়া ৩০ টাকা। সোনাখালিতে গাড়ী পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন ভাড়া ১০০ টাকা। সোনাখালি থেকে সুন্দরবন বাকি ভ্রমনটা লঞ্চে করে। এখানকার লঞ্চগুলি দোতলা, নিচে রয়েছে শোবার জায়গা, বাথরুম ও মালপত্র রাখার জায়গা। আর উপরের তলায় আছে বসার জায়গা ও খাওয়ার ব্যবস্থা। সুন্দরবন ভ্রমনে লঞ্চে ভাল খাওয়া দাওয়ার বন্দোবস্থ থাকে।
সুন্দরবন সম্পর্কে বিশদ জানতে – পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওয়েবসাইট

Sundarban Tour Plan Details
DAY 1
সোনাখালি – > হোগোল নদী -> কর্তাল নদী -> গধখালি -> বিদ্যাধরী নদী -> গোসাবা -> দূর্গা দুয়ারী নদী -> গুমদি নদী -> সুন্দরবন কোর এরিয়া -> পাখিরালয় -> রাত্রি নিবাস
সকাল ১০টা নাগাত সোনাখালি থেকে লঞ্চে করে যাত্রা শুরু। এরপর লঞ্চ বিভিন্ন ছোট বড় নদী দিয়ে এগিয়ে চলে। লঞ্চেই সকালের ব্রেক ফাস্ট করে নিন। গোসাবা পৌছে দেখে নিন হ্যামিল্টন বাংলো। খুব সুন্দর এই বাংলোটিতে হ্যামিল্টন সাহেব থাকতেন। হ্যামিল্টন সাহেবের বাংলো থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের বেকন বাংলো। এরপর লঞ্চে যেতে যেতে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের পাশ দিয়ে লঞ্চ এগিয়ে যাবে। পুরো এলাকাটি নেট দিয়ে ঘেরা যাতে বাঘ নদী পেরিয়ে লোকালয়ে না যেতে পারে। লঞ্চ এরপর পৌছবে পাখিরালয়। লঞ্চ রাতে এখানেই থাকবে। রাতে পাখিরালয়ে বা লঞ্চে থাকতে পারবেন।
DAY 2
পখিরালয় -> সজনেখালি -> সুধন্যখালি -> দোবাকি -> পাখিরালয়
পরদিন সকালে উঠে লঞ্চে করে বেড়িয়ে পড়ুন সজনেখালি টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট। এই সজনেখালিতে পেয়ে যাবেন সুন্দরবনের গভীর অরণ্যে যাবার পারমিশান। সজনেখালিতে রয়েছে ম্যানগ্রোভ মিউজিয়াম। এখানে সুন্দরবনের জিব বৈচিত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাবেন। এরপর লঞ্চ এসে পৌছবে সুন্দরবনের কোর এরিয়ার মধ্যে দিয়ে সুধন্যখালি ওয়াচ টাওয়ার। এই ওয়াচ টাওয়ারে উঠে অনেক দূর পর্যন্ত জঙ্গল পরিস্কার দেখা যায়। এই ম্যানগ্রোভ বনে সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, গোলপাতা ইত্যাদি আরও অনেক গাছের সন্ধান পাবেন। সুধন্যখালি থেকে প্রায় দু-ঘণ্টা জলে লঞ্চে করে এসে দোবাকি ক্যাম্প। অন্যান্য ক্যাম্পের মত দোবাকি ক্যাম্পের চারিদিক তারজাল দিয়ে ঘেরা যাতে বাঘ না আসতে পারে। সুন্দরবনের ওয়াচ টাওয়ার গুলির কাছে থাকে মিস্টি জলের পুকুর। আর এই পুকুর গুলিতে বন্য জীব জন্তুরা আসে জল খেতে।
DAY 3
পাখিরালয় -> ঝাড়খালি -> সোনাখালি
সুন্দরবনে এসে ঝড়খালিতে অবশ্যই বাঘ দেখতে পাবেন। এখানে অনেক পর্যটক আসে, তাই ছোট খাটো মেলা এখানে বসে। ঝড়খালি ওয়াল্ড অ্যানিম্যাল পার্কের প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। লোকালয়ে যে বাঘগুলি ধরা পরে সেগুলিকে এখানে এনে রাখা হয়। এই পার্কের জলাশয়ে বেশ কিছু কুমিরের দেখা পাবেন। পার্কে বাচ্ছাদের খেলার ভাল ব্যবস্থা আছে। পার্ক দেখে এবার লঞ্চে করে সোনাখালি ফেরার পালা।

গদখালি
কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়ি করে হাইরোড দিয়ে আসতে গেলে গদখালি হয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হবে। ডায়মন্ডহারবার থেকে বাসন্তী হাইওয়ে এই গদখালিতে শেষ হয়েছে। এরপর এখান থেকে ফেরি করে নদীর ওপারে গোসাবা। গোসাবা হল সুন্দরবনের শেষ দ্বীপ যেখানে মানুষের বসবাস আছে। গদখালি শুধু সুন্দরবনের প্রবেশ পথ তাই নয় এখানে সুন্দরবনের গভীর থেকে একের পর এক মাছ ধরার ট্রলার ও মাছের বোট গুলি এখানে এসে মাছ আনলোড করে। এইভাবে গদখালীতে একটা বড় মাছের মার্কেট তৈরি হয়েছে। কলকাতা সহ বিভিন্ন জায়গায় এখান থেকে মাছ সরবরাহ হয়।
গোসাবা
সুন্দরবনের যে কয়টি দ্বীপ আছে তার মধ্যে সবথেকে বেশি মানুষ এই গোসাবাতেই বাস করেন। ১৯০৩ সালে স্যার ডানিয়েল ম্যাকিনন হ্যামিল্টন নামে একজন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী তৎকালীন ইংরেজ সরকারের কাছ থেকে এই গোসাবা অঞ্চলটির জমি কিনেছিলেন। এরপর তিনি এখানে একটি বাংলো তৈরি করেছিলেন। গোসাবার সামগ্রিক উন্নয়নে স্যার হ্যামিলটনের যথেষ্ট অবদান আছে। আগে এই জায়গায় মানুষ খেকো রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির, সার্ক, বিষাক্ত সাপ ও বিভিন্ন জীবজন্তু বাস করত। গোসাবাতে এখনো হ্যামিল্টন স্যারের বাড়িটি অবশিষ্ট আছে। ১৯৩২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বাড়িতে কিছুদিন ছিলেন। গোসাবার প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই শান্ত। পাশেই জঙ্গলের দিক থেকে মৃদু বাতাস ও শান্ত পরিবেশ পর্যটকদের মন জয় করে নেয়। এছাড়া এখানকার স্থানীয় বাজারে প্রয়োজনীয় সব কিছুই কিনতে পাওয়া যায়।
পাখিরালয়
পাখিরালয় গোসাবার একবারে শেষের দিকে অবস্থিত। আগে এক সময় এখানে প্রতি বছর শীতকালে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি আসতো, আর তার থেকেই এই জায়গাটির নাম হয় পাখিরালয়। সময়ের সাথে সাথে এখন অবশ্য অত পাখি আর আসে না কিন্তু তাও জঙ্গলের এই জায়গায় অনেক পাখি বাস করে। এখানে ফরেস্ট অফিসের একটি বাংলো আছে। আর বাংলোতে বসে চা কফি খেতে খেতে বনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
সজনেখালি
সজনেখালি সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান এর অন্তর্গত। 362 বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এই অরণ্য বিস্তৃত। এখানে মানুষের প্রবেশ নিষেধ। প্রকৃত পক্ষে এই সজনেখালি হল রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ ক্ষেত্র। সজনেখালি অভয়ারণ্যে বিভিন্ন প্রকার জীব জন্তু বাস করে। তার মধ্যে রয়াল বেঙ্গল ছাড়াও বন বিড়াল, হরিণ, কুমির, পরিযায়ী পাখি ইত্যাদি। এছাড়াও এখানে চারিদিকে ম্যানগ্রোভ বনভূমি দিয়ে ঘেরা।
পঞ্চমুখী
সুন্দরবনের বাঘেদের আরও একটি আবাসস্থল হল এই পঞ্চমুখী। পাঁচটি নদী এসে এই জায়গায় মিলিত হয়েছে। তাই এই জায়গাটির নাম পঞ্চমুখী। এখানে জঙ্গলে কাঁকড়া ও মধু পাওয়া যায়। তাই জেলেদের খুব প্রিয় স্থান ছিল এই পঞ্চমুখী। কিন্তু বর্তমানে এই জায়গাটা মোটেই নিরাপদ নয়। প্রায়ই এখানে নদীর তীরে কাদাতে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়। এছাড়াও অনেকেই এখানে বাঘের দেখা পেয়েছে।
ডোবাকি
এখানকার মূল আকর্ষণ হল ওয়াচ টাওয়ার ও তার সাথে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড ওয়াকওয়ে। জঙ্গলে এসে পর্যটকরা যাতে খুব ভালোভাবে জঙ্গলের অনুভূতি পায় তার জন্যই এই 40 ফুট উঁচু এলিভেটেড ওয়াকওয় তৈরি করা হয়েছে। এই এটি তার জাল দিয়ে ঢাকা ফলে চারিপাশে বনে জীবজন্তুরা ছাড়া অবস্থায় রয়েছে আর আপনি এখানে খাঁচার মধ্যে। ডোবাকিতে ওয়াচ টাওয়ারের কাছেই একটি কৃত্রিম মিষ্টি জলাশয় তৈরি করা হয়েছে যাতে বাঘ সহ অন্যান্য জীবজন্তুরা এসে জল খেলে টাওয়ার থেকে তা পরিষ্কার দেখা যায়।
সুধন্য খালি
এখানেও ডোবাকির মতো একটি বড় ওয়াচ টাওয়ার আছে। সুধন্য খালি ওয়াচ টাওয়ারে ধারণ ক্ষমতা 25 জন পর্যটক। কাছেই একটি মিষ্টি জলের পুকুর রয়েছে। অনেক বন্যপ্রাণী এই পুকুরের জল খেতে আসে। আর পাশেই রয়েছে একটি বিশাল মাঠ আর এখান থেকে জঙ্গলের অনেকটা দূর পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যায়। এই ওয়াচ টাওয়ার থেকে হরিণ, বুনো শুয়োর, কুমির ইত্যাদি নানান জীবজন্তু দেখতে পাওয়া যায়।